• Sunrise At: 5:57 AM
  • Sunset At: 6:12 PM
info@talimeislam.com +88 01975539999

অযূর ফরয/সুন্নাত/মুস্তাহাবসমূহ

অযূ

চুম্বক চুম্বকে আকর্ষণ করে। চুম্বক কাঠ, বালু, মাটি বা পানিকে আকর্ষণ করে না। কারণ কাঠ, বালু, মাটি বা পানিতে চুম্বক যে প্রকৃতির অনু তালাশ করে তা নেই। কাজেই যে জিনিস যা আকর্ষণ করে সে জিনিসের কাছে যেতে তার

আকর্ষণের অনু হতে হবে। অর্থৎ পবিত্র পবিত্রতাকে আকর্ষণ করে, অপবিত্রতা কখনই পবিত্রতাকে আকর্ষণ করতে পারে না। তাই অযূ পবিত্র নামাযকে এবং নামায মহাপবিত্র আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনকে আকর্ষণ করে। পবিত্র হতে হলে প্রথমে সঠিক নিয়মে অযূ করতে হবে। নামাযের পূর্বশর্ত হলো অযূ করা। সঠিক নিয়মে অযূর মাধ্যমে মানুষের দেহ ও আত্মা পবিত্রতা লাভ করে। অযূ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “বিহিশতের কুঞ্জি বা চাবি নামায। আর নামাযের কুঞ্জি বা চাবি পবিত্রতা অর্থৎ অযূ”। সহীহ আল বুখারী ও সহীহ

মুসলিম শরীফে বর্ণিত, নুয়াইম মুজমির বলেন,

رقيت مع ابي هريرة رضي الله عنه على ظهر المسجد، فتوضأ فقال

إني سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول : إن أمـتـي يـدعـون يـوم

الـقـيـامـة غـرا مـحـجـلـيـن مـن آثـار الـوضـوء، فـمـن اسـتـطـاع مـنـكـم أن يـطـيـل

غرته فليفعل. (بخاری : فـضـل الـوضـوء، مسلم : استحباب إطالة الغرة)

অর্থ: আমি আবূ হুরায়রা (রা.) এর সঙ্গে মসজিদের ছাদে উঠলাম। তিনি অযু করলেন এবং বললেন, আমি নবী ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ক্বিয়ামাতের দিন আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে যে, তাদের অযূর অঙ্গগুলো ঝলমল করতে থাকবে। অতএব তোমাদের কেউ যদি তার উজ্জ্বল স্থানকে দীর্ঘ করতে চায় সে যেন তা করে। (সহীহ আল বুখারী: ১/২৫ ও সহীহ মুসলিম: ১/১২৬)

পবিত্রতা অর্জনের জন্য শরী‘য়াতের বিধি-বিধান অনুসারে হাত, পা, মুখমন্ডল ধৌত করা ও মাথা মাসেহকে অযূ বলে।

অযূর ফরযসমূহ

অযূ সম্পর্কে আল্লাহপাক সূরা আল মা’য়িদাহর ৬০ নং আয়াতে বলেন,

يا أيها الذين أمنوا إذا تـمـثـم إلـى الـصـلـوة فاغسلوا وجوهكم

وأيديكم إلى المرافق وامسحوا برؤوسكم وأرجلكم إلى الكنيين

অর্থ: হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাযের উদ্দেশ্যে উঠো তখন তোমাদের মুখমন্ডল এবং উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত কর এবং মাথা মাসেহ কর এবং পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর।

অযূর ফরয চারটি

১. মাথার সম্মুখ ভাগ চুল উঠার স্থান থেকে থুতনির নিচ পর্যন্ত এবং এক কানে লতি হতে অন্য কানের লতি পর্যন্ত সমস্ত ললাট ও মুখমন্ডল ধৌত করা। (হাতে পানি নিয়ে দাড়িতে লেপটে দিয়ে গালে ও থুতনিতে পানি পৌঁছাতে হবে, যাতে মুখমন্ডলের সমস্ত জায়গায় পানি পৌঁছায়।)

২. দু’হাত কনুইসহ একবার ভালভাবে ধৌত করা। (এক হাতের আঙ্গুল ও তালু দিয়ে অন্য হাতের উপর ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ভালভাবে ধুবে।)

৩. মাথার চার ভাগের এক ভাগ দুই হাত দ্বারা একবার মাসেহ করা।

৪. উভয় পা টাখনুসহ একবার উত্তমরূপে ধৌত করা।

অযূর সুন্নাতসমূহ

১. অযূর শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ হির রাহমানির রাহীম’ পড়া।

২. মিসওয়াক করা। (রোযার সময়ও মিসওয়াক করা সুন্নাত)

لولا أن أشق على أمتي لأمرتهم بالسواك عند كل صلاة. (مسلم :باب السواك

অর্থ: যদি আমার এই আশঙ্কা না হত যে, উম্মতের জন্য কঠিন হবে তাহলে তাদেরকে প্রতি নামাযের সময় মিসওয়াকের আদেশ করতাম। (সহীহ মুসলিম: ১/১২৮)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, “ মিসওয়াক করে নামায আদায় করলে মিসওয়াক বিহীন নামায অপেক্ষা ৭০ গুন

বেশী সাওয়াব লাভ হয় । (বায়হাকী)

৩. তিনবার হাত ধোয়া ।

৪. তিনবার কুলি করা।

৫. তিনবার নাকে পানি দেয়া।

৬. অযূর সকল অঙ্গ তিনবার করে ধোয়া।

৭. দাড়ি খিলাল করা।

ان النبي صلى الله عليه وسلم كان يخلل لحيته. (ترمذی : ما جاء

في تـخـلـيـل الـلـحـيـة. وقال : حسن صحيح)

অর্থ: নবী ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়ি খিলাল করতেন। (জামি তিরমিযী: ১/৬)

৮. আঙ্গুল খিলাল করা।

৯. প্রথমে ডান অঙ্গ ধোয়া।

১০. অযূর অঙ্গগুলো ডলে ডলে ধোয়া।

১১. ধারাবাহিকতা রক্ষা করা এবং এক অঙ্গ শুকিয়ে যাওয়ার আগেই অন্য অঙ্গ ধৌত করা অর্থৎ অযূর কাজগুলোর মধ্যে বিরতি না দেওয়া।

১২. কান মাসেহ করা। মাথা মাসেহ করার পর ভেজা হাত দিয়েই কান মাসেহ করা সুন্নাত ।

হাদীস শরীফে এসেছে, অর্থ: রুবাইযি (রা.) বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অযূ করতে দেখেছেন। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথার সম্মুখ ভাগ ও পিছন ভাগ এবং মাথার উভয় পার্শ্ব ও কান একবার মাসেহ করেছেন।

১৩. গর্দান মাসেহ করা।

১৪. অযূ শেষে কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করা ।

অযূর মুস্তাহাবসমূহ

১. কা’বা শরীফের দিকে মুখ করে অযূ করা।  ২. পানির পাত্র বাম পার্শ্বে রেখে অযূ করা, ট্যাপের পানি আস্তে ছাড়বে। ৩. ডান দিক হতে অযূ আরম্ভ করা। ৪. অযূর প্রত্যেক অঙ্গ ধুবার সময় নির্দিষ্ট দু’আ পড়া।

৫. বাম হাতের কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধাঙ্গুলির সাহায্যে নাক সাফ করা। নাকে পানি দেয়ার সময় মুখ বন্ধ রাখা।

৬. দুই হাতের পিঠ দ্বারা ঘাড় মাসেহ করা । ৭. প্রত্যেক অঙ্গ ভালমত ঘষে ধৌত করা, আংটি কিংবা গহনা থাকলে

নেড়েচেড়ে ত্বকে পানি পৌঁছানো।  ৮. প্রত্যেক অঙ্গ নির্দিষ্ট পরিমান স্থান হতে কিছু বেশী ধৌত করা।

৯. উভয় পা শুধু বাম হাতের সাহায্যে ধৌত করা। শীতকালে পা আগে

পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখা। ১০. প্রত্যেক অঙ্গ ধৌত কিংবা মাসেহ্ করার শুরুতে বিসমিল্লাহ ও শেষে

দরূদ শরীফ পড়া । ১১. ওযর না থাকলে কারো সাহায্য না নিয়ে অযূ করা। ১২. অযূ করার সময় কোন কথা না বলা । ১৩. কেটলি দিয়ে অযূ করা। ১৪.উচু স্থানে বসে অযূ করা। ১৫. অযূর নিয়ত মুখে বলা।

১৬. অযূ শেষে অবশিষ্ট পানি হতে কিছু পানি পান করা।

১৭. নামাযের সময়ের পূর্বেই অযূ করে নামাযের জন্য অপেক্ষা করা।

সংগ্রহঃ নামায শিক্ষা কিতাব থেকে। লেখকঃ হযরত মাওলানা মুফতি আল্লামা ডক্টর মুহাম্মাদ মনজুরুল ইসলাম সিদ্দিকী  দাঃবা, পীর সাহেব, তালিমে ইসলাম, মানিকগঞ্জ, বাংলাদেশ। মূল কিতাবটি পড়ার অনুরোধ রইলো।

Lorem Ipsum

Designed by Mohd Nassir Uddin